এত অত্যাচার আর ভালো লাগছে না

তানাজ হঠাৎ করে কান্না শুরু করে দিলো….
পারিজাত রহমান অবাক
হিসাম মাহমুদ অপ্রস্তুত।

কি হলো, আপনি ঠিক আছেন?
বলে টিস্যু বক্স এগিয়ে দিলেন পারিজাত রহম্মান

টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে তানাজ বললেন, কিচ্ছু ঠিক নাই ম্যাম, বাসায় গিয়ে হিসাম খুবই খারাপ আচরণ করছে আমার সঙ্গে, সে বাচ্চাদের সব সিদ্ধান্ত নেবে, কারণ সে বাবা, আমি নাকি বাচ্চাদের আরবি ও শেখাতে পারবো না। সাঁতার কারাতে তো দূরের বিষয়।

আচ্ছা বলেন, এই যে আমি বাচ্চাদের পেটে ধরলাম, রাত জেগে জেগে বাচ্চাদের খাওয়ানো, ন্যাপি বদলানো। হিসাম তো হাসপাতাল থেকে বাচ্চা নিয়ে বাসায় ঢোকার দিন থেকেই আলাদা ঘরে ঘুমায়। বাচ্চাগুলোর জন্য নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে বাচ্চা বড় করলাম, স্কুলে আনা নেওয়া, বাচ্চাদের পছন্দের খাবার রান্না করা, সব একা এই দুইহাতেই।

এখানে তো মা, শাশুড়ি বা বোন নেই, এরপরে আছে সংসারের বাজার, রান্না, ক্লিনিং, ওয়াশিং ইদত্যাদি কত কাজ কোনো সাহায্যকারী ছাড়া। এসবের জন্য আমি তো কোনো পারিশ্রমিক নেই না, সব নিজের সংসার, নিজের বাচ্চা, এদেশে দেখভালের কেউ নেই, এসব না করে যদি চাকরী করতাম তাহলে তো হিসামের ও কষ্ট হতো। বাচ্চা দুটো কি আমার না? তাহলে হিসাম কেন আমার সঙ্গে এমন করে?

পারিজাত রহমান হিসাম মাহমুদের দিকে তাকালেন,
উনি বেশ অপ্রস্তুত

মৃদু স্বরে বলছেন, এসব কি বলছো তানাজ? আমি তো বলেছি এখন ওগুলো না শেখায় ভালো, পরে দেখা যাবে, তোমাকে বুঝিয়েই তো বাচ্চাদের ডেকে বললাম তোমার সামনেই।

দেখেছেন ম্যাম কত বড় ভণ্ড, তাহলে এখানে আমার সিদ্ধান্ত বা মতামত কোথায়? সে তো তার সিদ্ধান্ত আমার ওপরে চাপিয়ে দিলো।

ছেলেটার একটা অংকের টিউটর খুবই দরকার, আমি তো এখন পার্টটাইম জব করি, আমি টাকা দিতে চাইলাম, তাতেও সমস্যা। আমার ইচ্ছে করে বাচ্চাদের নিয়ে আলাদা হয়ে যাই, এই অত্যাচার আর ভালো লাগছে না

পারিজাত রহমান হিসামের দিকে তাকালেন বললেন আমি ওই দিন আপনাদের কি বললাম?

দেখুন ম্যাম, আপনি বলেছিলেন তানাজের সঙ্গে বসে সব সিদ্ধান্ত নিতে বাচ্চাদের প্রয়োজন বুঝে, এজন্যই তো আমি তানাজকে বুঝলাম, কিন্তু সে না বুঝেই চেঁচামেচি, বাসায়ও ও এমন করে, কিছুই বুঝতে চায় না।

চিন্তা করেন ম্যাম কেমন পাজী, কিভাবে সংসার করে গেছি কত যে অত্যাচার করে, তার ভাই-বোনের বাচ্চাদের ও কিন্তু ৪/৫টা করে টিচার, বলে এগুলো তাদের ব্যাপার।

যখন বলি এত্ত এত্ত উপহার কিনে সব ভাই-বোনের বাচ্চাদের দাও, ওনারা তো বড়োলোক, আমার বাচ্চাদের কিনে দেয় ১২০ টাকার গেঞ্জি। তখন বলে আশা করো কেন? আশা করবা না।

আমি আশা করবো না, ঠিক আছে, তাহলে তোমার বোন দেশে যাওয়ার আগে এত লম্বা লিস্ট পাঠায় কেন? তোমার বন্ধুর বউ আমার হাতের বিরিয়ানি আর আচার খেতে চায় কেন? ওঁনাদের এতো আশা কেন? আমি কেন আমার রোজগার দিয়ে আমার বাচ্চাদের পড়াতে পারবো না?

দেখছেন ম্যাম, এমনই পাগল, খালি তুলনা করা। আরে এসব টিচার না দিয়ে আমরা দুজনে পড়াই, বাচ্চাদের সাথে বন্ড ভালো হবে।

চিন্তা করেন কেমন কিপ্টে, তোমার সঙ্গে বণ্ড ভালো না বাচ্চাদের, তুমি পড়াও…অসহ্য একটা লোক, কোনো ভদ্র, সভ্য কোনো আচরণও জানে না, সারাক্ষণ ছোটলোকি আর প্যাচ।

হিসাম মুচকি হাসছেন, আর বললেন তানাজ তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, কিছুদিন বিশ্রাম নাও

একদম চুপ, তোমার সাথে যে থাকবে, সেই অসুস্থ হয়ে যাবে, তুমি নিজে অসুস্থ এজন্য আশপাশের সবাইকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলছো।

আপনারা দুজনেই থামুন প্লিজ, আর একটা কথাও না। অনেক হয়েছে, আমি যা বোঝার বুঝেছি। আমি আপনাদের একসাথে সেশন করবো না, আলাদা আলাদাই ভালো। এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না কোনোদিন।

জ্বি, ম্যাম তানাজ বললেন, আপনি আমাকে বলেন কিভাবে দুই বাচ্চা নিয়ে আমি আলাদা হতে পারবো? এই মিচকার সঙ্গে আর না, আমার জীবনটা গেছে, আমি আমার ছেলেমেয়েদের জীবন নষ্ট হতে দেবো না।

তুমি এগুলো কি বলছো তানাজ?
মাথা ঠিক আছে?

নাহ, ঠিক নেই, আগেই তো বলেছ,
এখন এগুলো সব ভান করছে ম্যাম, বাসায় গেলে পুরোটাই উল্টে যাবে।

আচ্ছা, আপনারা আজকে আসুন, আমার পরবর্তী ক্লায়েন্টের সময় হয়ে গেছে। পরে কখনো আসবেন আলাদা আলাদা প্লিজ।

তানাজ ও হিসাম দুজনেই উঠে চলে গেলেন, যাওয়ার আগে হিসাম মাহমুদ একটু থেমে বলে গেলেন, কিছু মনে করবেন না ম্যাম, তানাজের আজকে মাথা ঠিক নেই, তার খুবই মুড সুয়িং করে, পরে কখনো আসবো, আজকে যাই।

You May Also Like