শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীও গা ঢাকা দিয়েছেন। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা কার্যক্রম।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ব্যতিক্রম গুরুদাসপুর। এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় আগেই নেতাকর্মীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে কোনো দলের নেতাকর্মী বা সমর্থক আক্রান্ত হননি। এরপরও আওয়ামীপন্থি জনপ্রতিনিধিরা কেন গা ঢাকা দিয়েছেন, আমার জানা নেই। তারা নিয়মিত অফিস করুক, জনগণের সেবা দিক। তাদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব আমাদের।’
গুরুদাসপুরের ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ, একটি পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দিয়ে আছেন। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র জনপ্রতিনিধিরা অফিসে উপস্থিত না থাকায় উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ সেবাগ্রহীতারা।
সোমবার সকালে বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত একটি কাজ নিয়ে এসেছিলেন নাইম হোসেন। ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে।
একই দিনে ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদে ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে এসে ফিরে গেছেন আব্দুল আলিম। চেয়ারম্যান না থাকায় কাজটি হয়নি। একইভাবে প্রতিটি পরিষদের একই চিত্র দেখা যায়। অতি দ্রুত জনপ্রতিনিধিদের পরিষদে ফেরার আহ্বান জানান সেবাগ্রহীতারা।
সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহম্মদ আলী মোল্লা, ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা লীগের সভাপতি শাহিদা আক্তার মিতা সেখানে নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মোল্লা জানান, তিনি শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তিনি ও তাঁর কোনো নেতাকর্মী বাধা দেননি। তবে সরকার পতনের পর সারাদেশেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাসাতেই অবস্থান করেছেন। মঙ্গলবার থেকে পরিষদের কার্যক্রম শুরু করবেন।
একই চিত্র দেখা গেছে পৌরসভাতেও। পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আলীসহ আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলররাও কার্যালয়ে আসেননি।
মোবাইল ফোনে পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনো দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী, ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, চাপিলা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, মশিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারী, খুবজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম দোলন এবং বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান সুজা এখন পর্যন্ত পরিষদে আসেননি।
ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, শিগগিরই পরিষদের কার্যক্রম শুরু করা হবে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আপাতত সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। এ সময় তারা বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের স্লোগান দেন। ১৮ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও তারা অতর্কিত হামলা চালান। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ওপর আক্রমণ আসতে পারে এমন আশঙ্কায় গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিগগিরই জনপ্রতিনিধিরা কর্মস্থলে ফিরে আসবেন। এরই মধ্যে তারা নিরাপদ স্থান থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।