স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরে ঝিনাইদহের মহেশপুরে প্রতিপক্ষের গুলিতে শামীম হোসেন ও মন্টু মণ্ডল নামে দু’জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত আকালে পলাতক।
নিহতরা হলেন বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে শামীম হোসেন (৪০) ও নয়ন মণ্ডলের ছেলে মন্টু মণ্ডল (৫৫)। এ ঘটনায় শামীমের বাবা শামসুল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সীমান্ত এলাকায় স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আকালে নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধ ছিল শামীম হোসেন, রাফি ও মন্টু মণ্ডলের। এই বিরোধের জেরে বুধবার বিকেলে তারা আকালের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় আকালে দৌড়ে তার বাড়ির ছাদে উঠে যায়। আকাল ছাদ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়লে মন্টু ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ শামীম ও তাঁর বাবা শামসুলকে উদ্ধার করে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলিবিদ্ধ শামসুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত শামীমের স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে শামীম ও মন্টুকে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছিল। আজ ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
তবে আকালের স্বজনদের দাবি, আকালেকে হত্যা করতে তাদের বাড়িতে হামলা করা হয়। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। হঠাৎ গুলিতে দু’জন আহত হন। তাদের ধারণা, সশস্ত্র অবস্থায় তারা এসেছিলেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাদের অস্ত্রের গুলিতেই তারা আহত হন। পরে তারা মারা গেছেন বলে শুনেছেন।
মহেশপুর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, নিহত, আহত ও হামলাকারী সবাই স্বর্ণ চোরাকারবারি ছিল। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই গুলি ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত বলেন, শামীমকে আমরা মৃত অবস্থাতেই পেয়েছি। তাঁর বুকে গুলির চিহ্ন আছে। আর শামসুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নেপা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানান, তারা সবাই চোরাকারবারি। প্রায়ই আকালে, শামীম ও মন্টু ভারতে যেত। স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরেই গুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নেপা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য ছায়েরা খাতুন জানান, বিভিন্ন সময় সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি স্বর্ণ উদ্ধার করলেই সেটির জন্য শামীম, মন্টু ও শামীমের ভাই রাফি আকালেকে দোষারোপ করত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক দিনের ঝামেলা। এরই জেরে বুধবার বিকেলে শামীম, রাফি ও মন্টু মিলে আকালের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে উভয়ের মধ্যে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দু’জনের মৃত্যু হয়।