হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ওপর কাউন্সিলরের কর্মীদের হামলা

হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেনের কর্মীদের বিরুদ্ধে। বুধবার বেলা দেড়টার দিকে পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে হরিজন সম্প্রদায়ের নারী শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিরনজিল্লা এলাকায় নির্মিত নতুন ভবনে হরিজন সম্প্রদায়ের ৬৬ জন বাসিন্দাকে তুলে দিতে সেখানে গিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন তার কর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরুজ্জামানের সঙ্গে কাউন্সিলর ও তার কর্মীরা কলোনির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন কাউন্সিলরের কর্মীদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে মারামারি হয়। এ সময় কাউন্সিলরের লোকজন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ সময় কলোনির ভেতরে থাকা মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার সময় আটকা পড়েন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মিরনজিল্লা পল্লীর গেটে ইটের ছড়াছড়ি। গেটে ইটের দাগ। ইটের আঘাতে ভেঙে গেছে জানালা কাচ। মন্দিরের ভেতরে পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার। মন্দিরের ভেতরে ইটের ছাড়াছড়ি।

মিরনজিল্লা পল্লী সেবক সমিতির সভাপতি কৃষ্ণচরণ কুঞ্জুমার দাবি করেন কাউন্সিলরের সাথে আসা নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করেন। সে সময় প্রধান গেটের সাথে অবস্থিত মন্দিরে পূজা অর্চনা করছিলেন। সেখানে ইট পাটকেন নিক্ষেপ করলে নারীরা আহত হন।

ঘটনার পর পরিদর্শনে আসেন মিরনজিল্লা পল্লী ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সীমা দত্ত। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে কাউন্সিলের লোকজন হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে করপোরেশনের প্রায় ৩ দশমিক ২৭ একর জমি আছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছেন। কলোনির এক পাশে ২৭ শতাংশ জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তাই সেখানকার কিছু বাসাবাড়ি ভেঙে দিতে হবে। আগের কাঁচাবাজারটি ১৭ শতাংশ জমিতে ছিল। বাকি জমি থেকে স্থাপনা সরাতে গত ১০ ও ১১ জুন অভিযান চালাতে গিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেদিন অভিযান চালানো যায়নি।

উচ্ছেদ ঠেকাতে পরে আদালতে গেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। ১৩ জুন আদালত মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে থাকা হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন।

You May Also Like