গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ৫২ জেলায় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৫২ জেলায় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের সুরক্ষা চাই। কারণ আমাদের জীবন বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। আমরা রাত জেগে নিজের ঘর-মন্দির পাহারা দিচ্ছি। এমন ঘটনা আমি আমার জীবনে দেখিনি। আমরা নতুন সরকারের কাছে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খোলা চিঠি প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এ চিঠিতে সই করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে শুধু পবিত্র কোরআন ব্যতীত অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ না করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ।
তিনি বলেন, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ না করার বিষয়টি আমাদের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিরোধী। আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে প্রধান প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের সংখ্যা আমাদের কাছে জানা নেই। একটা কথা বলতে চাই, একটা মানুষ বাধ্য না হলে নিজের ভিটে, দেবালয়, তুলশীতলা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন না। তবে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমি নিজেও আমার পরিচিত একজনের বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যারা দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করতে হবে। যদি রাজনৈতিক কারণে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হন, সেটিও কাম্য নয়। কেউ কোনো অপরাধ করলে, তার বিচার হবে। কিন্তু তার বাড়িঘর পোড়ানো, লুটপাটের মাধ্যমে কোনো বিচার হবে না।
সংগঠনের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করার কথা সবার মুখে শুনেছি, কিন্তু বন্ধ করার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের জাতীয় সম্পদ, ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের কাছে মোটেও কাম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য রঞ্জন কর্মকার, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রমুখ। পরিচালনা করেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।