টাঙ্গাইলের সখীপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দখল নিয়ে বিরোধের জেরে সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয়ের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এতে জোয়াহেরের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম আতিকুর রহমান আতোয়ারসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সখীপুর-টাঙ্গাইল ও সখীপুর-ঢাকা সড়কে উপজেলার নলুয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত অন্যরা হলেন– উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহমেদ, সদস্য আসাদুজ্জামান খান লিটন, উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও যাদবপুর ইউপির সদস্য আজমত আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার কামরুল হাসান, হাতীবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল মিয়া, যাদবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য হুরায়রা খান নির্ঝর, সাংবাদিক জাহিদ হাসানসহ ১৫ জন। গুরুতর আহত চারজনকে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে বর্তমান এমপি জয়ের। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হলে জয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জোয়াহের বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে সমর্থন দেন। তবে নতুন করে দু’জনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের জন্য একটি স্থায়ী কার্যালয় নিয়ে। জোয়াহেরের দাবি অনুযায়ী, তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের জন্য একটি স্থায়ী কার্যালয় ভবন করেন। গত সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে কার্যালয়ের একতলা ভবনের কাজ শেষ হয় এবং এটি উদ্বোধন করেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে নৌকা পেয়ে বিজয়ী হন জয়। তার আগেই কার্যালয়ে তালা দেন জোয়াহেরের অনুসারীরা। তবে গত ১৮ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে নেতাকর্মীরা তালা ভেঙে কার্যালয়ের দখল নেন এবং পরে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। ২০ এপ্রিল কার্যালয়ের পেছনে সাবেক এমপির ছবি ময়লার স্তূপে পেয়ে তাঁর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন এবং প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করেন। তবে এমপির লোকজন হুমকি দিলে নলুয়া বাজারে মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে সাবেক এমপির পক্ষে ব্যানার নিয়ে নলুয়া বাজারের পাকা সড়কে দাঁড়াতেই এমপি জয়ের অনুসারী সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত সিকদারের লোকজন রড, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলার ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিক জাহিদ হাসানকেও বেধড়ক মারধর করা হয়।
আহত এ কে এম আতিকুর রহমান আতোয়ারের অভিযোগ, এমপি জয়ের লোকজন হুমকি দেওয়ায় ঝামেলা এড়াতে উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে মানববন্ধন করেছি। কিন্তু সেখানেও এসে শওকত সিকদারের লোকজন হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমাদের অনেকের মাথা ফেটেছে, হাত ভেঙে গেছে। এমপির ফুপাতো ভাই শিবলু, আতিকুর রহমান বুলবুল, মির্জা শরীফ, জাকির হোসেন রাজু, এ কে এম রুহুল আমিনসহ শতাধিক ব্যক্তি হামলা চালায়। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সাবেক এমপি জোয়াহেরুল বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এমপি জয় ও শওকত সিকদারের নির্দেশে হামলা হয়েছে। আমি নিন্দা ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত সিকদার বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। হামলার ঘটনা দুঃখজনক। যারা এ অপকর্ম করেছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানতে চাইলে এমপি জয় বলেন, ‘আমি তিন দিন ধরে ঢাকায়। ঘটনা শোনামাত্র ওসিকে ফোন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
সখীপুর থানার ওসি শাহিনুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত তারা কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।