গাজীপুরে ব্যবসায়ী নিহত, আহত অর্ধশত
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় দিনভর আন্দোলনকারীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা মাওনা হাইওয়ে থানায় আগুন দেয়। পুড়িয়ে ফেলে তিনটি পুলিশ বক্স ও পুলিশের তিনটি গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আন্দোলনকারীদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে পুলিশ। সংঘর্ষের সময় জাকির হোসেন (৫০) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মারধরের শিকার হয়েছেন তিন সংবাদকর্মী।
শ্রীপুর উপজেলার আন্দোলনের সমন্বয়ক পিয়ার আলী কলেজের শিক্ষার্থী সারফুল ইসলাম জানান, তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তবে শ্রীপুর থানার ওসি আকবর আলী খান জানান, তারা কোনো গুলি চালাননি; বরং পুলিশের ওপর হামলায় তাদের কয়েক সদস্য আহত হয়েছেন।
মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আলহেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১২-১৩ আহতকে আনা হয়। তাদের মধ্যে সাত থেকে আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রত্যেকের বুকে-পিঠে রাবার বুলেটের ক্ষত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজনকে নেওনা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী মাওনা ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাওনা চৌরাস্তার দিকে এগোতে থাকেন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দেখে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। একই সময়ে ফ্লাইওভারের নিচে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও মিছিল শুরু করেন। পরে পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকা থেকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী পুরো মাওনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাওনা হাইওয়ে, জেলা পুলিশ ও থানা পুলিশের তিনটি বক্সে হামলার ঘটনা ঘটে। ব্যাপক ভাঙচুরের পর তিনটি বক্সেই আগুন দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন। পরে শ্রীপুর সড়কে ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সের ভেতর পার্ক করা পুলিশের তিন গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেয়। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার রমজান আলী রুবেলসহ তিন সাংবাদিককে মারধর করে আন্দোলনকারীরা।
পরে আন্দোলনকারীরা মাওনা ফ্লাইওভারের উত্তর ও দক্ষিণ দিকসহ মাওনা বাজার সড়কে অবস্থান নেয়। সেখানে চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বিকেলের দিকে মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর বিকেল ৫টার দিকে সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সন্ধ্যার পর শ্রীপুর শহরের টেংরা মোড় এলাকায় পুনরায় অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়। শ্রীপুর থানার ওসি আকবর আলী খান জানান, জাকির হোসেন মাওনার বকুলতলা এলাকায় লেপ-তোশকের ব্যবসা করতেন। আন্দোলন চলাকালে মারা গেলেও কীভাবে, তা জানা যায়নি।
এ ছাড়া জেলার কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের সময় অন্তত ১২টি যানবাহন ভাঙচুর করে।
কুমিল্লায় মিছিলে গুলি, আহত অর্ধশতাধিক
কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন ও রেসকোর্স এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের নেতাকর্মী মাঠে থাকলেও কেউ গুলি চালায়নি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ছবি ও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে মিছিল নিয়ে পুলিশ লাইন ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা জবাব দিলে সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একদল যুবক তাদের দিকে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশ লাইন্সের ভেতর ও আশপাশের বিভিন্ন বাসায় অবস্থান নেন।
ফেসবুকে ছড়ানো ছবিতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করা হচ্ছে। এ সময় তাদের কারও কারও মুখে মুখোশ ছিল। কুমিল্লা পুলিশের একটি সূত্র শিক্ষার্থীদের ওপর শটগান ও পিস্তল থেকে গুলি করার কথা জানালেও, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন ও জামাল উদ্দিন বলেন, কুমিল্লা মহানগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর আন্দোলনে অংশ নেই। আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মিছিল থেকে হামলা ও গুলি করা হয়েছে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ঢুকে গুলি চালিয়েছে। এখন আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গুলিবিদ্ধ সৌরভের চোখের আঘাত গুরুতর। তাঁকে ঢাকায় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সংগ্রহের সময় যমুনা টিভির কুমিল্লা ব্যুরোপ্রধান খোকন চৌধুরীর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৪ সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন।
সংঘর্ষের পর থেকে গুলিবিদ্ধ ৩ ছাত্রের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম জানান, মারা যাওয়ার খবর গুজব। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাণভয়ে পুলিশ লাইন্সে আশ্রয় নেয়। আমরা তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ও ছবি দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নেমে আত্মরক্ষা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য চৌধুরী ও তাঁর গাড়িচালক। ওই ঘটনায় হামলাকারীরা কেউ শিক্ষার্থী নন বলে দাবি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব।
ফরিদপুরে সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ১৫
ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন ক্যাম্পাসে। আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখান থেকে একটি মিছিল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে যাওয়া চেষ্টা করে। এ সময় গোয়ালচামট মডেল মসজিদের সামনে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে হামলা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আধাঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের মিছিল এগোনোর সময় প্রথমে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা করে। রাস্তার ইট-খোয়া দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করা হলে পালিয়ে যায়। পরে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। হামলায় ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারী আহাদুজ্জামান রনি।
এদিকে সংঘর্ষে আহত সঞ্জয় বৈরাগী নামে এক নার্সিং শিক্ষার্থীর শরীরে ১৮টি রাবার বুলেট লেগেছে বলে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স আফসানা আফরোজ জানিয়েছেন। তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আহত এ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মিছিল ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে গেলে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এরপরই পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে খবর সংগ্রহে গিয়ে আজকের কাগজের প্রতিনিধি শ্রাবণ হাসান, দৈনিক ফতেহাবাদের জাকির হোসেন ও ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি জহির উদ্দিন আহত হয়েছেন। আর টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়তে গিয়ে এক নারী কনস্টেবল আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বরিশালে ৪ পুলিশকে মারধর
ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড চৌমাথায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি ভ্যান ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। তারা দুই পুলিশ সদস্যকে বেদম মারধর করে পোশাক খুলে ফেলে। তার আগে বেলা ১১টা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
দুপুর ১টার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল সিঅ্যান্ডবি রোড চৌমাথার দিকে চলে যায়। বেলা দেড়টার দিকে এপিবিএন পুলিশের একটি ভ্যান ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করে। ভ্যানে থাকা চার পুলিশ সদস্যকে বেদম মারধর করা হয়। এ সময় চৌমাথায় থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এর আগে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী কয়েক যুবক ধারালো অস্ত্র হাতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ার মুখে তারা পালিয়ে যায়। ধারালো অস্ত্রধারী এক যুবককে আটকে বেদম মারধর করে শিক্ষার্থীরা।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপিবিএনের ভ্যানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দুপুরের খাবার নেওয়া হচ্ছিল। আহত চার পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিলেটে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
সিলেটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জিন্দাবাজার এলাকায়। পুলিশের হামলার কারণে ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও রাজপথ ছাড়েনি। চৌহাট্টা এলাকায় ধাওয়া খেয়ে নগরীর জিন্দাবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ ভুয়া ভুয়া ও সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। মূল অংশ চৌহাট্টায় ধাওয়া খেয়ে মোড়ের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে রাখে। কিছুক্ষণ পর পর পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চৌহাট্টা ও জিন্দাবাজার মোড়ে বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেটের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সামসুজ্জামান জামান, এক পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যায়ও আন্দোলনকারীরা জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছিলেন।
লোহাগাড়ায় আ’লীগ কার্যালয়ে আগুন
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভকারীরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কার্যালয়ের আসবাব মহাসড়কে এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। স্টেশনের প্রায় দুই শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে বাধা ও বেশ কয়েকজনকে হয়রানি করা হয়।
এ ছাড়া রাত সাড়ে ৮টার দিকে লোহাগাড়া থানার সামনে পরিত্যক্ত গাড়িগুলোতে আগুন দেয়। থানাসংলগ্ন মাশাবী রেস্টুরেন্ট ও লোহাগাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
নওগাঁ, বগুড়া, জামালপুর ও মৌলভীবাজারে সংঘর্ষ
নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের মিছিল সরিষাহাটি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশ এসে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা, থানা রোড, বড়গোলা ও শেরপুর এবং খান্দার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ও ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হন।
জামালপুর শহরের বাইপাস মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা নিউমার্কেট এলাকায় হামলা চালালে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন।
টাঙ্গাইল ও রাজশাহীতে হামলা-সংঘর্ষ
টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর পানির ফোয়ারা চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা পেরিয়ে পৌর চত্বরে মিছিল নিয়ে ফেরার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যসহ আটজন আহত হন।
রাজশাহীতে বিক্ষোভ চলাকালে মহানগর পুলিশের এক গোয়েন্দা সদস্যের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া ঘটনা ঘটেছে। আহত পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম সিটিএসবিতে কর্মরত। এ ছাড়া তিন সংবাদকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের মিছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে নগরীর রেলগেট পর্যন্ত যাওয়ার পথে তিনটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স, একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়, একটি রেলওয়ে গার্ড বক্স, একটি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয় ও বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।